গাজীপুর

নুহাশ পল্লী, গাজীপুর – কিভাবে যাবেন, খরচ এবং যোগাযোগ ঠিকানা

নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) নন্দন কাননটি গাজীপুর জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত। নুহাশ পল্লীর বর্তমান আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা। ১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমিতে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু করেন। হুমায়ূন পুত্র নুহাশের নামানুসারে নুহাশ পল্লী নামকরণ করা হয়। নুহাশ পল্লীর প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের স্পর্শ এবং ভালোবাসা। বিভিন্ন নাটক, সিনেমার শুটিং এর পাশাপাশি নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় পরিবার বা প্রিয়জন নিয়ে একদিনেই ঘুরে দেখে আসতে পারবেন নুহাশ পল্লী।

নুহাশ পল্লীতে কি কি আছে ( What is there in Nuhash Palli? )

নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ পথের পরই হাতের বাম দিকে দৃষ্টিনন্দন সবুজ প্রান্তর চোখে পড়বে। এই প্রান্তরের বাম পাশের লিচু বাগানে শায়িত আছেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। নুহাশ পল্লীর প্রবেশ পথ ধরে এগিয়ে গেলেই স্থানীয় স্থপতি আসাদুজ্জামান খানের ‘মা ও শিশু’ নামক ভাস্কর্যটি দেখেতে পাবেন। শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভুত ও ব্যাঙের আকারের ভাস্কর্য। এর পাশেই তৈরী করা হয়েছে আঁকাবাঁকা সুইমিং পুল। ভারতের প্রখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এই সুইমিং পুলেই সাঁতার কেটে ছিলেন।

সুইমিং পুল পেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেই একে একে দেখতে পাওয়া যায় হুমায়ূন আহমেদের কটেজ, দাবা খেলার ঘর এবং নামাজ পড়ার স্থান। এরপরেই রয়েছে বিশাল টিনশেডের বারান্দাসহ ‘বৃষ্টিবিলাস’ কটেজ। এই কটেজের বারান্দাতে বসেই হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি ও পূর্নিমা দেখতে পছন্দ করতেন। ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে তাঁর বিখ্যাত ট্রি হাউজ। নুহাশ পল্লীতে রয়েছে একটি ঔষধি গাছের বাগান, এছাড়াও রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির বিভিন্ন গাছ।

ঔষধি গাছের বাগানের পেছনে রয়েছে টিন এবং কাদামাটি দিয়ে তৈরি করা শুটিং স্পট। আর বাগানের সামনের দিকে রয়েছে মৎস্য কন্যা ও রাক্ষসের মূর্তি। এর পাশে কনক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডাইনোসারের মূর্তি। নুহাশ পল্লীর সর্ব উত্তরে রয়েছে লীলাবতী দিঘি। এই দিঘির মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ যা একটি কাঠের সেতুর সাথে যুক্ত। লীলাবতি দিঘির পাশেই রয়েছে ‘ভুতবিলাস’ নামক আরো একটি ভবন। এছাড়াও সাজানো গুছানো নুহাশ পল্লীতে একটি দিন কাটানোর ক্ষণে ক্ষণেই আপনি সমস্ত নুহাশ পল্লীতে কবির অস্তিত্ব অনুভব করবেন।

এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানকাধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নরিকেল গাছ।

এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (Sunil Gangopadhyay) এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে জলে নেমেছিলেন, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে।

 

নুহাশ পল্লী যাওয়ার উপায় ( Ways to go Nuhash Palli )

নুহাশ পল্লীতে যেতে প্রথমে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে। ঢাকা থেকে প্রভাতি, বনশ্রী ইত্যাদি বেশ কিছু বাস সার্ভিস চলাচল করে। ঢাকা থেকে হোতাপাড়া যেতে বাসে চড়ার স্থানভেদে ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। হোতাপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে টেম্পো, রিকশা অথবা সিএনজিতে করে নুহাশ পল্লী যাওয়া যায়। টেম্পোর ভাড়া লাগবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। রিকশা ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া লাগবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। চাইলে নিজের ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়েও বেড়াতে যেতে পারবেন নুহাশ পল্লী।

নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ মূল্য এবং সময়সূচী ( Nuhash Palli Entry Fee & Time )

নুহাশ পল্লী সারা বছর দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে। কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বিশেষ অনুরোধে মাগরিবের আজান পর্যন্ত সাধারন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হয়। নুহাশ পল্লীতে ১২ বছরের উপরে জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা ধরা হয়েছে। ১০ বছরের নীচে বাচ্চাদের, ড্রাইভার এবং গাড়ি পার্ক এর জন্য কোন টাকা লাগেনা। হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে হলে কোন প্রবেশ ফি লাগেনা। কবর জিয়ারতের জন্য মূল গেইটের বাইরে বাম দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি গেইট আছে যে কেউ সেই গেইট দিয়ে ঢুকে কবর জিয়ারত করতে পারবেন।

খরচ (Cost)

এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এটি সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য ১টি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিনগুলোতে ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ৪০ হাজার টাকা।

থাকার ব্যবস্থা ( Accommodation )

নুহাশ পল্লীতে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি বিলাস নামের বাংলোতে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে সকলের। তবে ভুত বিলাস নামের বাংলোতে সময় কাটানোর জন্য ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা লাগবে।

আশেপাশে দর্শনীয় স্থান ( Nearby Attractions )

নুহাশ পল্লীর খুব কাছেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। ঢাকা থেকে একদিনে নুহাশ পল্লী ঘুরে আসার পরিকল্পনা থাকলে এর সাথে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। যদিও সাফারি পার্ক পুরোটা ঘুরে দেখতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনি আপনার সময় অনুযায়ী নুহাশপল্লীর সাথে সাথে সাফারি পার্ক ঘুরে দেখার পরিকল্পনা সাজাতে পারেন। এছাড়া চলার পথে ইচ্ছে হলে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে কিছুটা সময় কাটিয়ে যেতে পারেন।

Tags
Show More

ভ্রমণ গাইড

ভ্রমণ নির্দেশনা - দেশ বিদেশ ভ্রমণের সকল তথ্য ও পরামর্শ. বাংলাদেশ ও বিদেশের দর্শনীয় ভ্রমণ স্থানে ঘুড়ে বেড়ানোর সকল তথ্য নিয়েই "দূরে কোথাও!"। কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি দেখবেন, খরচ, ভ্রমণ গল্প, টিপস ও নিউজ সহ ভ্রমণ সম্পর্কিত সবকিছু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Close
error: Alert: Content is protected !!